Tuesday, November 30, 2010

আকাশলীনা


সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনাঃ
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে;


ফিরে এসো এই মাঠে , ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূর - আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।


কী কথা তাহার সাথে? -তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মত তুমি আজ:
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস:
বাতাসের ওপারে বাতাস
-আকাশের ওপারে আকাশ।



Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

Friday, November 26, 2010

কৃষ্ণকলি


কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের'পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে, ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা, মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে, আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

এমনি করে কাজল কালো মেঘ জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস, লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।




Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

কেউ দেখেনি



কৃষ্ণকলি কেউ বলে না তাকে
কালো তাকে বলে পাড়ার লোক
মেঘলা কোথা, সব ক'টা দিন খরা
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ
বাপের তার নেইকো টাকা মোটে
অর্থ ছাড়া পাত্র কোথা জোটে?
কালো তা সে যেমন কালো হোক
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ

লোডসেডিং-এ আধার হলো দেখে
পাত্র পক্ষ করছিলো যাই যাই
কালো মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
ভেতর হতে ত্রস্তে এলো তাই
ছেলের বাবা কোঁচকালো তার ভুরু
মেয়ের বুক কাঁপলো দুরু দুরু
কালোই - তা সে যেমন কালো হোক
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ।

পূবে বাতাস এলো হঠাৎ ধেয়ে
বোগেন ভিলায় খেলিয়ে গেলো ঢেউ
জানলা ধারে দাঁড়িয়ে মেয়ে একা
রাস্তা ধারে ছিলো অনেক কেউ
তার পানে কেউ দেখলো কিনা চেয়ে
শংকা বুকে ট্যারিয়ে দেখে মেয়ে
কালোই - তা সে যেমন কালো হোক
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ।

পার হয়ে যায় মাসির কালো মেয়ে
জৈষ্ঠ মাসে কয়েক হাজার পণে
কোথায় একা কাকার মেয়ে কাজল
আষাঢ় মাসে পালায় সংগোপনে
যখন একা শ্রাবণ রজনীতে
কোন ভাবনা ঘনায় মেয়ের জিতে?
কালো তা সে যেমন কালো হোক
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ

কৃষ্ণকলি কেউ বলে না তাকে
কালো তাকে বলে পাড়ার লোক
দেখেছিলেম সিলিং থেকে ঝোলা
কালো মেয়ের বিস্ফোরিত চোখ
কিচ্ছু বোঝার দেয়নি অবকাশ
শাড়িই খানি হলো গলার ফাঁস
কালোই - তা সে যেমন কালো হোক
কেউ দেখেনি কালো হরিণ চোখ


Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

Saturday, November 13, 2010

রানার


সুকান্ত ভট্টাচার্য

রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।

রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার দূর্বার দূর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের মত ধায় !
কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন্ জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো।

এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখ, বহু বেদনায়, অভিমানে অনুরাগে
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
রানার ! রানার !
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে ?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে ?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেমন, জানবে পথের তৃণ
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই পাঠাবে সহানুভূতির খামে-
রানার ! রানার ! কী হবে এ বোঝা ব'য়ে।
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিকে ক্ষ'য়ে ক্ষ'য়ে ?
রানার ! রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল,
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল ?
রানার ! গ্রামের রানার !
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চল আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির 'মেলে',
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরী নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার।।

রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।

রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার দূর্বার দূর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের ম ধায় !
কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন্ জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো।

এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখ, বহু বেদনায়, অভিমানে অনুরাগে
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
রানার ! রানার !
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে ?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে ?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেমন, জানবে পথের তৃণ
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই পাঠাবে সহানুভূতির খামে-
রানার ! রানার ! কী হবে এ বোঝা ব'য়ে।
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিকে ক্ষ'য়ে ক্ষ'য়ে ?
রানার ! রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল,
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল ?
রানার ! গ্রামের রানার !
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চল আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির 'মেলে',
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরী নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার।।